পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

৬ শ্রমিক আটক, মোবাইল কোর্টে জরিমানা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া, শিলাইদহ, মাজগ্রাম ও কল্যাণপুরসহ আশপাশের পদ্মা নদী ঘিরে গড়ে উঠেছে অবৈধ বালু উত্তোলনের রমরমা ব্যবসা। একটি প্রভাবশালী চক্র প্রতিদিন কোটি টাকার কাছাকাছি মূল্যের বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে একদিকে হুমকির মুখে পড়ছে নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব হারাচ্ছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বিষয়টি ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

রবিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর ও মাজগ্রাম এলাকায় ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে পদ্মার তলদেশ থেকে বালু তুলে বলগেটে ভরাট করছেন শ্রমিকরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রশাসন তাৎক্ষণিক অভিযান চালায়। অভিযানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে ৬ জন শ্রমিককে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়। পরে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে মোট এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিজয় কুমার জোয়ার্দার।

জিজ্ঞাসাবাদে শ্রমিক মো. হানিফ জানান, “আমরা দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা হাজিরায় কাজ করি। আমাদের এখানে এনেছেন বালু ব্যবসায়ী সম্রাট।” একইসঙ্গে গাইবান্ধা থেকে আসা আরেক শ্রমিক আসাদুল ইসলাম বলেন, “সম্রাটসহ আরও কয়েকজন মিলে বালু তুলছে। আমরা শুধু শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। প্রতি বলগেটে প্রায় ৬ হাজার ফিট বালু ওঠে, বিক্রির দাম আমাদের জানা নেই।” স্থানীয়দের তথ্য মতে, প্রতিটি ফিট বালু ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। গেল তিন-চার মাস ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিতভাবে পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে।

বালু ব্যবসায়ী হিসেবে অভিযুক্ত সম্রাট হোসেন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, “বকুল নামের এক যুবদল নেতা পদ্মার ইজারা নিয়েছেন। আমি কেবল তার কাছ থেকে বালু কিনে অন্যত্র বিক্রি করছি।” তবে সম্রাটের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী, নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বকুল নৌ চলাচলের জন্য প্রতি ফিট বালুর জন্য দেড় টাকা এবং উত্তোলনের জন্য ৪ টাকা করে নেন। গত তিন-চার মাস ধরে সম্রাটের নেতৃত্বেই কাজ চলছে।”

অভিযোগ অস্বীকার করে ইজারাদার সালমান এফ রহমান ওরফে বকুল বলেন, “আমি কেবল বৈধভাবে দেড় টাকা নিচ্ছি। বালু উত্তোলনের সঙ্গে আমার কোনো যোগসূত্র নেই। বরং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সম্রাট প্রভাব খাটিয়ে নিয়মিত বালু তুলে চলেছেন।” এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিজয় কুমার জোয়ার্দার বলেন, “পদ্মায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে ৬ জনকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে পরিচালিত হবে।”

13 thoughts on “পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামযের সময়সূচি