হরিণ চুরি না গাফিলতি ? দুর্গাসাগর ঘিরে রহস্য ও উদ্বেগ

ফাহিম আহমেদ

বরিশালের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান দুর্গাসাগর-এ থাকা ১৩টি হরিণের মধ্যে একটি হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। খাঁচা তালাবদ্ধ থাকার পরও কীভাবে একটি হরিণ উধাও হয়ে গেল, সেটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য ও প্রশ্ন।ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার, ৩ আগস্ট। প্রতিদিনের মতোই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা ডিউটি শেষ করে সকালে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। সকাল ১০টার দিকে হরিণ পরিচর্যাকারী আশিক লক্ষ্য করেন, একটি হরিণ খাঁচায় নেই। বিষয়টি তিনি দ্রুত সমন্বয়কারী মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে জানান। তিনি এসে নিশ্চিত হন—খাঁচার তালা অক্ষত থাকলেও একটি হরিণ নিখোঁজ।

সিসিটিভি ফুটেজেও নেই কোনো ক্লু
নিখোঁজ হরিণ উদ্ধারে তাৎক্ষণিকভাবে দুর্গাসাগর দিঘির আশপাশে থাকা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে খাঁচার আশপাশের ক্যামেরাগুলো নষ্ট বা অকার্যকর থাকায় কোনো দৃশ্য বা তথ্য উদ্ধার সম্ভব হয়নি। ফলে বিষয়টি আরও রহস্যময় রূপ ধারণ করে।

সাধারণ ডায়েরি, প্রশাসনের পরিদর্শন ও তদন্ত
ঘটনার পর দিঘির সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর হোসেন বরিশাল এয়ারপোর্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করে বরিশাল জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দুর্গাসাগর পরিদর্শনে যান। সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মতিন খান বলেন, “খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমেদ জানান, “নিখোঁজ হরিণের ঘটনা জানার পর আমি নিজে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।”

স্থানীয়দের ক্ষোভ ও প্রশ্ন
স্থানীয়রা বলছেন, এটি হয় চুরি, নয়তো চরম দায়িত্বে অবহেলার ফলাফল। তাদের অভিযোগ, নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি নিয়মমতো পাহারা দিতেন, সিসিটিভিগুলো সচল থাকত—তবে হয়তো হরিণটি রক্ষা করা যেত। তারা দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

দুর্গাসাগর: ইতিহাস ও গুরুত্ব
উল্লেখ্য, দুর্গাসাগর বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা গ্রামে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক দিঘি। এটি খনন করেন চন্দ্রদ্বীপের রাজা শিব নারায়ণের মাতা রানী দুর্গাবতী ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে। তার নামানুসারেই এই দিঘির নাম ‘দুর্গাসাগর’। এটি বরিশালের একটি অন্যতম প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র। দিঘির মাঝে একটি সবুজ দ্বীপে রাখা হয়েছিল হরিণগুলো—যা দর্শনার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় উপাদান।

সংক্ষেপে ঘটনা
স্থান: দুর্গাসাগর, বাবুগঞ্জ, বরিশাল
তারিখ: ৩ আগস্ট ২০২৫ (রবিবার)
নিখোঁজ: খাঁচায় থাকা ১৩টি হরিণের মধ্যে একটি
তদন্ত: জিডি, প্রশাসনিক পরিদর্শন, সিসিটিভি অচল
অভিযোগ: নিরাপত্তা গাফিলতি ও চুরির সম্ভাবনা
প্রতিক্রিয়া: তদন্ত দাবি স্থানীয়দের

27 thoughts on “হরিণ চুরি না গাফিলতি ? দুর্গাসাগর ঘিরে রহস্য ও উদ্বেগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামযের সময়সূচি