
বিনোদন ডেস্ক
কলকাতা ও মুম্বাইয়ের পর্দায় নিজের প্রতিভার ছাপ রেখে চলেছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী। অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজ সচেতনতা এবং ব্যক্তিত্বের গভীরতায় তিনি অনেকের অনুপ্রেরণা। তবে রঙিন আলোর নিচে তার জীবনের কিছু অন্ধকার অধ্যায়ও রয়েছে, যা এতদিন অনেকটাই আড়ালে ছিল।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ঋতাভরী খোলাখুলি শেয়ার করলেন তার ছোটবেলার কিছু না-বলা কথা। মা-বাবার বিচ্ছেদ, মানসিক টানাপোড়েন এবং সেই সময়কার আবেগঘন মুহূর্তগুলো তুলে ধরলেন তিনি সরল অথচ শক্ত গলায়।
মা-বাবার বিচ্ছেদ: ছোট বয়সেই জীবনের কঠিন বাস্তবতা
ঋতাভরী জানান, তার মা — বিশিষ্ট অভিনেত্রী ও পরিচালক শতরূপা স্যান্যাল, এবং বাবার বিচ্ছেদের সময় তিনি ছিলেন খুবই ছোট। বিচ্ছেদের পর ঋতাভরী তার দাদু-দিদার কাছে চলে যান। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এই স্থান পরিবর্তন তাকে মানসিকভাবে খুব একটা নাড়া দেয়নি।
ঋতাভরীর কথায়,
“যখন দাদু-দিদার কাছে চলে এলাম, তখন ওই বাড়িতে থাকতে আমার কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমরা ওই বাড়িতে ঘন ঘন যেতাম। তাই ব্যাপারটা আমার কাছে ছিল খুবই স্বাভাবিক। আমার নতুন করে মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যাই হয়নি।”
চোখের জল নয়, হৃদয়ের ভার বোঝেননি এমন কেউ ছিল না
তবে এসব কথার আড়ালে ছিল গভীর কষ্ট। অভিনেত্রী স্বীকার করেন, মা শতরূপাকে কখনো প্রকাশ্যে ভেঙে পড়তে দেখেননি, কিন্তু তবুও সেই বেদনাবোধ স্পর্শ করেছিল তাকে।
তিনি বলেন,
“মাকে হয়তো আমি কখনও হাউ হাউ করে কাঁদতে দেখিনি। মা লুকিয়ে যেতেন। কিন্তু দুটো ঘরের বাড়ি, কতটা আর লুকিয়ে যাওয়া যায়? যেটা কানে আসার এসেছে, যেটা বুকে ধাক্কা লাগার সেটা লেগেছে।”
এই কথাগুলোতে ধরা পড়ে ঋতাভরীর অনুভবশীলতা এবং ছোটবেলায় পাওয়া মানসিক আঘাতের ছাপ।সাহস আর আত্মপরিচয়ের গল্প
ঋতাভরীর শৈশবের সেই সময়টাতে, অনেকেই তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে প্রশ্ন করতেন, ‘তোমার কি বাবার কথা মনে পড়ে না?’ এমন প্রশ্নের সহজ অথচ তীক্ষ্ণ জবাব দিয়েছিলেন তিনি ছোট্ট বয়সেই।
“তখন আমি খেলতে খেলতেই জবাব দিতাম—‘শোনো, আমার মায়ের নামও শতরূপা স্যান্যাল, আমার বাবার নামও শতরূপা স্যান্যাল।’”

এই বক্তব্যে ধরা পড়ে এক অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস এবং মায়ের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। একাকী মায়ের সংগ্রাম, লড়াই আর ভালোবাসার পরিপূরক হয়ে উঠেছিলেন ঋতাভরী।
শেষ কথা
ঋতাভরীর এই খোলামেলা শেয়ারিং শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত জীবনের এক অধ্যায় নয়, বরং অনেকের জন্য সাহসের অনুপ্রেরণা। জীবনের জটিল পরিস্থিতি থেকেও কীভাবে শক্তির সঙ্গে এগিয়ে যেতে হয়, তা তিনি দেখিয়েছেন নিজের জীবন দিয়ে।
আজকের ঋতাভরী শুধুই একজন অভিনেত্রী নন, তিনি একজন যোদ্ধা — যিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন অভিজ্ঞতা, ব্যথা আর ভালোবাসার ইট-কাঠ দিয়ে।
https://shorturl.fm/trlbB
https://shorturl.fm/zg60a
https://shorturl.fm/jsn7k
https://shorturl.fm/g7SVr