কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন নিয়োগে প্রশ্নফাঁস ও অনিয়ম

বাদশা আলমগীর
— কুষ্টিয়া প্রতিনিধি —

কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে স্বাস্থ্য সহকারীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ পরীক্ষাকে ঘিরে দেখা দিয়েছে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে এক চিকিৎসকের বাসায় গোপনে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে একদল পরীক্ষার্থীকে। ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) গভীর রাতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ হোসেন ইমামের বাসায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৩০-৪০ জন পরীক্ষার্থীকে গোপনে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে সারা রাত ধরে ‘প্রশিক্ষণমূলক পরীক্ষা’র নামে মূল প্রশ্নপত্র দেখিয়ে তাদের প্রস্তুত করানো হয়।

পরদিন সকালে ওই একই পরীক্ষার্থীরা অংশ নেন সরকারি নির্ধারিত পরীক্ষাকেন্দ্রে। এতে সাধারণ পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করলে দেখা যায়— পরীক্ষার্থীরা গভীর রাতেই ওই বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা সিভিল সার্জন অফিসের নির্ধারিত পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

একজন ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থী বলেন,
“আমরা ভেবেছিলাম যোগ্যতা দিয়েই চাকরি পাব, কিন্তু এখন বুঝি— টাকাই আসল যোগ্যতা।”
আরেকজন অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের সন্তানরা দিনরাত পড়ে, কিন্তু যারা টাকা দেয় তারাই আগেই প্রশ্ন পেয়ে যায়। এটা শুধু অন্যায় নয়, এটি ন্যায়ের প্রতি চরম অবমাননা।”
অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি এখন একধরনের “দুর্নীতির বাণিজ্যে” পরিণত হয়েছে। সাধারণ পরীক্ষার্থীরা দাবি করেছেন— এই পরীক্ষা অবিলম্বে বাতিল করে পুনরায় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন,
“ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুতর। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অভিযুক্ত আরএমও ডা. মোহাম্মদ হোসেন ইমাম বলেন,
“আমি কিছুই জানি না। আমার বিল্ডিংয়ের নিচতলায় ভাড়াটিয়া ম্যাস আছে। সেখানে কী হয় আমি জানি না। তবে তদন্তে যদি আমার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়, আমি আইনের বিচার মেনে নেব।”
এদিকে, পুরো ঘটনাটি নিয়ে কুষ্টিয়া জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ পর্যন্ত বলছেন— এটি শুধু কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতি নয়, বরং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতার চরম ব্যর্থতা।

সুশীল সমাজের নেতারা বলেন,
“দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে ভবিষ্যতে আর কোনো পরীক্ষাই ন্যায্য থাকবে না। যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন, দুর্নীতি হবে নিয়মে পরিণত।”
তারা আরও বলেন, “মানুষ এখন চাকরি নয়, চায় সম্মান। সেই সম্মান রক্ষা করতে হলে এখনই প্রয়োজন সৎ প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া।”

2 thoughts on “কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন নিয়োগে প্রশ্নফাঁস ও অনিয়ম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *