প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ৮:৩৪ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ১০:৪৯ এ.এম
‘আদর্শ নারী’ থেকে ‘মানুষ’ হয়ে ওঠা: নিজের জীবনের না বলা গল্প শোনালেন বাঁধন
“রিহ্যাব সেন্টার থেকে রেড কার্পেট— বাঁধনের জীবনের প্রতিটি ধাপই সংগ্রামের প্রতীক”
বিনোদন প্রতিবেদক
ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন এবার জানালেন তাঁর জীবনের না বলা গল্প। লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা থেকে নায়িকা, আর সেখান থেকে একজন পরিপূর্ণ অভিনেত্রী হয়ে ওঠার দীর্ঘ যাত্রাপথে তিনি কেমন সংগ্রাম করেছেন, তা অকপটে তুলে ধরেছেন দর্শক ও শিক্ষার্থীদের সামনে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের কঠিন সময়ের কথা বলতে গিয়ে বাঁধন বলেন—
“একসময় সবাই আমাকে ‘লাক্স সুন্দরী’ বা ‘সাবান সুন্দরী’ বলত। তখন হয়তো সেটা উপভোগ করতাম, কিন্তু অল্প বয়সেই বুঝেছিলাম— কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্যে জীবন চলে না, পড়াশোনা আর নিজের ভেতরের শক্তিটাই আসল।” তবে তাঁর জীবনযাত্রা এতটা সহজ ছিল না। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে, এরপর ডিভোর্স, মানসিক যন্ত্রণা, রিহ্যাব সেন্টার— সব মিলিয়ে তিনি পেরিয়েছেন এক ভয়াবহ সময়।
বাঁধন বলেন, “আমি সিভিয়ার ডিপ্রেশনের রোগী ছিলাম, সঙ্গে সুইসাইডাল টেন্ডেন্সিও ছিল। আমার বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার আছে এবং আমি নিয়মিত অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট খাই। এগুলো নিয়ে কথা বললে অনেকে আমাকে ‘পাগল’ বলেছে। কিন্তু আমি জানি, আমি এখন ভালো আছি— কারণ আমি সেখান থেকে উঠে দাঁড়িয়েছি।” অভিনয়ের শুরুতে কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করলেও পরে থেরাপিস্টের এক প্রশ্ন তাঁকে বদলে দেয়। সেই মুহূর্তে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেন তিনি। এরপর আসে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া চরিত্র — ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।
পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাঁধন বলেন, “সাদ ভাই আমাকে একজন অভিনেত্রী হিসেবে নতুন করে জন্ম দিয়েছেন। ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-ই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।” অভিনেত্রী জানান, ২০১৮ সাল তাঁর জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল। সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি লড়াই তাঁকে পুরোপুরি বদলে দেয়। “আমার সন্তানের বাবা আমার কাছ থেকে তাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল। সেই সময় আমি সবচেয়ে অসহায় বোধ করেছিলাম। সমাজ, আইন, এমনকি আমার পরিবারও বলেছিল— না, এটা তুমি পারবে না। কিন্তু আমি হার মানিনি। লড়েছি, আর সেই লড়াইয়ে জিতে মেয়ের সম্পূর্ণ অভিভাবকত্ব পেয়েছি।” এই রায় শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জয় নয়, বরং উপমহাদেশের নারীদের জন্য এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বাঁধন বলেন, “আমি বহুবার ভেঙে পড়েছি, কিন্তু ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকেও আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। আজ আমি কেবল অভিনেত্রী নই, একজন মানুষ হিসেবে বাঁচতে শিখেছি। সমাজের বাঁধা নিয়ম মানিনি— নিজের অধিকার নিজের হাতে তুলে নিয়েছি।”
বর্তমানে বাঁধন শুধু অভিনয়ে নয়, বরং নারীর আত্মমর্যাদা, মানসিক স্বাস্থ্যের সচেতনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে সরব কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত।