অভিযোগের পর বদলি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার দুই এসআই সরাইল ও নবীনগরে

অর্থ আদায় ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তদন্ত শুরু, পুলিশের অভ্যন্তরীণ কমিটি কাজ করছে

এনামুল হক আরিফ
ব্যুরো চিফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার দুই উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রফিকুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলমকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব-সংক্রান্ত মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ ওঠে।

জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে গত বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) জারি করা এক অফিস আদেশে এসআই রফিকুল ইসলামকে সরাইল থানা ও এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে নবীনগর থানায় বদলি করা হয়।

অভিযোগ ও তদন্তের অগ্রগতি

জানা গেছে, ২০২১ সালে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের পর দায়ের করা একাধিক মামলায় নির্দোষ ব্যক্তিদের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী, ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীদের কেউ মৌখিকভাবে, কেউ লিখিতভাবে এসব অভিযোগ পুলিশ প্রশাসনের কাছে জমা দেন।
সদর মডেল থানার একাধিক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, অভিযুক্ত দুই এসআইয়ের আচরণ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে থানার ভেতরেই দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছিল।
জেলা পুলিশের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে প্রাথমিক সাক্ষ্যগ্রহণ, অভিযোগপত্র পর্যালোচনা এবং ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন করেছে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, “অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রতিবেদন খুব শিগগিরই পুলিশ সুপারের কাছে জমা দেওয়া হবে।”

পুলিশ প্রশাসনের বক্তব্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সবসময় জবাবদিহিমূলক প্রশাসন পরিচালনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেকোনো অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। প্রাথমিকভাবে কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় প্রশাসনিক কারণে তাদের বদলি করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অভিযুক্তদের বক্তব্য ও জনমত

অভিযুক্ত এসআই রফিকুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
“আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিছু মহল ব্যক্তিগত স্বার্থে আমাদের নাম ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।” এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল পুলিশের এ পদক্ষেপকে ইতিবাচক উদ্যো হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, “জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখতে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা প্রশংসনীয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *