শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় প্রমাণ করে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়: প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে আদালতের দণ্ডাদেশ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ক্ষমতার অবস্থান যত উঁচুই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তিনি আজ এক বিবৃতিতে জানান, বাংলাদেশের আদালত যে ভাষায় রায় ঘোষণা করেছে, তা দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্ত প্রতিধ্বনি তুলেছে। জুলাই–আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষের প্রতি এই রায় পুরোপুরি ন্যায়বিচার না হলেও এটি ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

“বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ” 01612346119

তিনি বলেন, দীর্ঘ বছরের দমন-পীড়ন, ভয়াল সহিংসতা এবং প্রশাসনিক অপব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি এখন পুনর্গঠনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। যে অপরাধে এই বিচার হয়েছে, তা কেবল আইন ভঙ্গ নয়; নিরস্ত্র তরুণ-তরুণী ও শিশুদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যকার আস্থার সম্পর্ককেই ভেঙে দিয়েছিল। এ ঘটনা বাংলাদেশের মৌলিক মূল্যবোধ, মর্যাদা এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারকে গভীরভাবে আঘাত করে। প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি দেশের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায় হয়ে আছে। তারা কেউই কেবল পরিসংখ্যান ছিল না; তারা ছাত্র-ছাত্রী, বাবা-মা এবং সমান অধিকারের নাগরিক।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আদালতে মাসের পর মাস শুনানিতে উঠে এসেছে কীভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানো হয়েছিল। আজকের রায় তাদের দুর্ভোগকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে যে ন্যায়বিচারের প্রশ্নে ছাড় দেওয়া হবে না। বাংলাদেশ আবারও বৈশ্বিক জবাবদিহির মূলধারায় ফিরছে। পরিবর্তনের দাবিতে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের ত্যাগই আজকের অগ্রযাত্রার ভিত্তি।

তিনি উল্লেখ করেন যে শুধু আইনি জবাবদিহি নিশ্চিত করাই নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার কাজটিও এখন জরুরি। মানুষ কেন প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য এত বড় ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত হয়েছিল, সে কারণগুলো বুঝতে হবে এবং সেই আস্থার যোগ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি শক্ত ভিত্তি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন বাংলাদেশ সাহস এবং সংযমের সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং মানুষের সম্ভাবনার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলে ন্যায়বিচার কেবল টিকে থাকবে না, বরং দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগিতা করায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *