নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বিশ্বজুড়ে অনলাইন পরিবেশে হঠাৎ বিশাল বিভ্রাট দেখা দেয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার), চলচ্চিত্র পর্যালোচনাভিত্তিক সাইট লেটারবক্সসহ অসংখ্য ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। ব্যবহারকারীরা যখন এই সাইটগুলোতে ঢুকতে চেষ্টা করেন, তখন একটি বার্তা প্রদর্শিত হয়, যার মধ্যে উল্লেখ করা হয় যে ক্লাউডফ্লেয়ারের সমস্যার কারণে পেজ লোড করা সম্ভব হচ্ছে না।
ক্লাউডফ্লেয়ার হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ওয়েবসাইট নিরাপত্তা ও কনটেন্ট ডেলিভারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি সাইবার আক্রমণ প্রতিরোধ, উচ্চমাত্রার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুত কনটেন্ট ডেলিভারির মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী চালু থাকা ওয়েবসাইটগুলোর একটি বিশাল অংশ এই প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায়, সামান্য কোনো ত্রুটিই একযোগে বহু ওয়েবসাইটে প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রাথমিকভাবে বিভ্রাটের বিষয়টি স্বীকার করে ক্লাউডফ্লেয়ার একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা সমস্যাটি তদন্ত করছে এবং তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপডেট দেওয়া হবে। পরে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সমস্যাটি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং দ্রুত সমাধানের জন্য কাজ চলছে।
ওয়েবসাইট বিভ্রাট পর্যবেক্ষণকারী প্ল্যাটফর্ম ‘ডাউন ডিটেক্টর’ও প্রথমে একই সমস্যার সম্মুখীন হয়। যদিও কিছুক্ষণ পর সাইটটি পুনরায় লোড হওয়ার পর দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে বিভ্রাটের ঘটনায় রিপোর্টের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্লাউডফ্লেয়ারের সমস্যার কারণে হাজারো ওয়েবসাইট অচল হয়ে পড়ে। যদিও সঠিকভাবে কতগুলো ওয়েবসাইট এই বিভ্রাটে আক্রান্ত হয়েছে তা জানা যায়নি, তবে এটি স্পষ্ট যে একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মের ওপর বিশ্বজুড়ে ওয়েবসাইটের নির্ভরতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন। এ ধরনের বিভ্রাট একটি বড় উদাহরণ হিসেবে প্রমাণ করে যে, একক প্রযুক্তি প্রদানকারীর ওপর ওয়েবসাইটের নির্ভরতা কখনও কখনও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে ব্যবসা, সংবাদ পরিবেশনা এবং অনলাইন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে, এমন বিভ্রাট সামান্য সময়ের জন্য হলেও বিপুল ক্ষতি এবং তথ্য প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরাও এই বিভ্রাটের প্রভাব অনুভব করেছেন। অনলাইনে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় ব্যবহারকারীরা বার্তা দেখেছেন, ‘ক্লাউডফ্লেয়ারের নেটওয়ার্কে অভ্যন্তরীণ সার্ভার ত্রুটি দেখা দিয়েছে। কয়েক মিনিট পর পুনরায় চেষ্টা করুন।’ এই ঘটনা ওয়েবসাইট নিরাপত্তা এবং কনটেন্ট ডেলিভারি ব্যবস্থার ওপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
এর আগে এমন বিভ্রাট একাধিকবার ঘটেছে। প্রতিবারই এটি প্রমাণ করেছে যে, একক সার্ভিস প্রদানকারীর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ইন্টারনেট অবকাঠামোর জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ওয়েবসাইটগুলোকে বহু কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া উচিত।
এই বিভ্রাট থেকে শিক্ষা নিয়ে, ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের অনলাইন সেবা আরও স্থিতিশীল ও নিরাপদ করতে প্রযুক্তিগত বিকল্প এবং ব্যাকআপ ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ক্লাউডফ্লেয়ারের ত্রুটি দ্রুত সমাধান হলেও, এই ঘটনার ফলে ওয়েবসাইট নিরাপত্তা ও নির্ভরতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে।

01612346119