মোঃ জাকির হোসেন
চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার, মানহানি, প্যাড জালিয়াতি, ছবি বিকৃতি ও চাঁদা দাবির অভিযোগে তিন জন সাংবাদিক পৃথকভাবে মামলা দায়ের করেছেন। তারা হলেন—
- এনামুল হক আরিফ — প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা ও ব্যুরো চিফ
- আল-আমিন খন্দকার — অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা; ব্যুরো চিফ, দৈনিক অর্থদৃষ্টি
- তাহমিনা উদ্দিন — যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা; বিশেষ প্রতিনিধি
তিনজনই অভিযোগ করেছেন—ইয়াসিন মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আসছেন এবং বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছেন।
অভিযোগসমূহের সারসংক্ষেপ
১. প্যাড জালিয়াতি করে ভুয়া প্রচারণা
তিন সাংবাদিকের অভিযোগ—
ইয়াসিন মাহমুদ বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের অফিসিয়াল প্যাড জালিয়াতি করে বিভিন্ন ভুয়া তালিকা, ভুয়া বিজ্ঞপ্তি, সাংবাদিকদের নাম বিকৃত করে মিথ্যা পদত্যাগপত্র তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
সরকারি নিবন্ধিত এই জাতীয় সংগঠনের প্যাড জালিয়াতিকে তারা গুরুতর অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন।

২. মানহানিকর পোস্ট ও অপপ্রচার
তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নিম্নোক্ত মন্তব্য ও পোস্ট করেন ইয়াসিন মাহমুদ—
- “সাংবাদিকতার কার্ড লাগিয়ে চাঁদাবাজি করেন।”
- “উকিল পরিচয়ে ধান্দা করেন।”
- “প্রতারণা করে টাকা আদায় করেন।”
- একজনকে লক্ষ্য করে ছবি এডিট করে এমনভাবে প্রকাশ করা হয় যেন তিনি অপরাধী।
তাঁরা দাবি করেছেন—এসব মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মনগড়া এবং তাঁদের ব্যক্তি ও পেশাগত সুনামের ওপর মারাত্মক আঘাত।
৩. চাঁদা দাবি ও হুমকি
তিনটি মামলাতেই আলাদা আলাদাভাবে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠে এসেছে—
- এনামুল হক আরিফের কাছে দাবি — ৫ লক্ষ টাকা
- আল-আমিন খন্দকারের কাছে দাবি — ২ লক্ষ টাকা
- তাহমিনা উদ্দিনের কাছে দাবি — ২ লক্ষ টাকা
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে—চাঁদা না দিলে ফেসবুকে “এমন পোস্ট করা হবে যাতে সমাজে মুখ দেখানো কষ্টকর হয়ে যায়” বলে হুমকি দেওয়া হয়।
বিশেষ করে নারী সাংবাদিক তাহমিনা উদ্দিন জানান—এ ধরনের হুমকি তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।
৪. ছবি বিকৃতি ও নারীর মর্যাদায় আঘাত
তাহমিনা উদ্দিনের মামলায় উল্লেখ রয়েছে—
ইয়াসিন মাহমুদ তাঁর ছবি এডিট করে বিভ্রান্তিকর তথ্যসহ প্রকাশ করেছেন, যা একজন নারী সাংবাদিকের সম্মানহানি করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই বলেছেন—
- এটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সাইবার অপরাধ
- প্যাড জালিয়াতি, অপপ্রচার ও চাঁদা দাবি—সবই আইনযোগ্য গুরুতর অপরাধ
- এই মামলা সাইবার অপরাধ দমনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে
ট্রাইব্যুনালের পদক্ষেপ
চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল তিনটি মামলাই গ্রহণ করেছে এবং প্রাথমিক তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।
আইন অনুযায়ী—
- মানহানি
- জাল কাগজপত্র তৈরি
- ডিজিটাল হুমকি
- ছবি বিকৃতি
- সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার
- চাঁদাবাজির চেষ্টা
এসবই শাস্তিযোগ্য সাইবার অপরাধ বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মামলাকারী সাংবাদিকদের প্রত্যাশা
তিনজনই বলেছেন—
“আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রতিহিংসা নয়—ন্যায়বিচারই আমাদের লক্ষ্য।”
তারা বিশ্বাস করেন—আদালত যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন এবং সাইবার জালিয়াতি, অপপ্রচার ও হয়রানির বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় নজির স্থাপন হবে।