ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত 

নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে আয়োজনের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ উপলক্ষে কমিশন একটি বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, যেখানে গণভোটের প্রশ্ন, প্রস্তাবিত সাংবিধানিক সংস্কার এবং জুলাই জাতীয় সনদের ধারাগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। শনিবার ইসি সচিবালয়ের পরিচালক (জনসংযোগ) ও তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, “সর্বসাধারণের জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে।”

“বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ” 01612346119

গণভোটে যেসব প্রশ্ন জনগণের সামনে উপস্থাপন করা হবে, তার মূল বিষয়টি হলো জুলাই জাতীয় সনদে প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কারের প্রতি ভোটারদের সম্মতি জানা। ভোটারদের সামনে প্রশ্ন থাকবে— তারা জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫ এর প্রতি “হ্যাঁ” বা “না” ভোট দেবে কি না।

গণভোটে মোট চারটি মূল প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদের আলোকে গঠন করা হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ দুই কক্ষবিশিষ্ট হবে। দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, এবং সংবিধান সংশোধনের জন্য এই উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন হবে।
তৃতীয় প্রস্তাবটি নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন, সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচনসহ মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্থানীয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংক্রান্ত ৩০টি বিষয়ের সংস্কার নিয়ে। জুলাই সনদে এসব বিষয়ে যে ঐকমত্য হয়েছে, নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো তা বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে।
শেষ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জুলাই সনদে উল্লিখিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বাসসকে বলেন, ইসি ইতোমধ্যে একসঙ্গে ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তার ভাষায়, “জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের জন্য আমরা শতভাগ প্রস্তুত।” তিনি জানান, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে, রমজান শুরুর আগেই নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে ‘মক ভোটিং’ সম্পন্ন করেছে, যেখানে এক ভোটারকে দুটি ব্যালটে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ভোট গ্রহণে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে। তাই ভোটের সময় বাড়ানো এবং প্রতিটি কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। আগামী কমিশন সভায় এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, “একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হলে ভোটাররা আরও উৎসাহ নিয়ে ভোট দিতে আসবে বলে আমার বিশ্বাস। তখন পুরো প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই উৎসবমুখর হয়ে উঠবে।” তিনি জানান, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের সচেতনতা এবং প্রচারণা তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পরিচালনা করবে।

সব মিলিয়ে, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তৈরি করতে যাচ্ছে। কমিশনের মতে, ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়ানো ও প্রক্রিয়াটি সহজ করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *