নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় আজ বৃহস্পতিবার ভোরে আবারো মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সকাল ৬টা ১৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডে হওয়া এই ভূ-কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুরে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্র থেকে এটি ৩৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থান করছিল। স্থানীয়ভাবে কম্পন কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় এবং অনেকেই ঘুম থেকে উঠে বিষয়টি অনুভব করেছেন।
ইউরো-মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল গাজীপুরের টঙ্গী থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরপূর্বে এবং নরসিংদী শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার উত্তরে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল প্রায় ৩০ কিলোমিটার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন গভীরতার ভূমিকম্প সাধারণত মাঝারি কম্পন তৈরি করে এবং ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি তুলনামূলক কম থাকে। তবে ধারাবাহিকভাবে একই এলাকায় ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়া ভূ-তাত্ত্বিক অস্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দিতে পারে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে ভূমিকম্পের একটি ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে। ঠিক এক সপ্তাহ আগেই, ১ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা ৫৫ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ৯ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। সেটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মিনজিন এলাকায়। চট্টগ্রাম অঞ্চলসহ দেশের কিছু অংশে কম্পনটি স্পষ্টভাবে টের পাওয়া যায়।
এর আগে ২৭ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটের দিকে রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়, যার কেন্দ্রস্থল ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল। একই দিনে ভোরে সিলেট এবং কক্সবাজারের টেকনাফে দুটি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। বারবার ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, যদিও বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
চলতি মাসেই ২১ নভেম্বর ও তার পরদিন প্রায় ৩১ ঘণ্টার মধ্যে ঢाका ও এর আশপাশে চারবার ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ছিল ২১ নভেম্বর সকালে। রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের উৎস ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার, ফলে কম্পনের জোর ছিল উল্লেখযোগ্য। সেই ঘটনায় দেশে ১০ জন নিহত হন এবং আহত হন পাঁচ শতাধিক মানুষ।
সাম্প্রতিক সব ভূমিকম্প বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উৎপত্তিস্থল হচ্ছে নরসিংদী ও এর আশপাশের এলাকা। ভূ-তাত্ত্বিক গঠন, ফল্ট লাইন সক্রিয়তা এবং মাটির নিচে চাপ সঞ্চয়ের কারণে এই অঞ্চলে মাঝেমধ্যে ভূমিকম্প হওয়া নতুন কিছু নয়। তবে বারবার কম্পন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অধিক সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
আজকের ভূমিকম্পে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর না মিললেও বিশেষজ্ঞরা নাগরিকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

01612346119