প্রধান উপদেষ্টাকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর ফোন, বন্যায় সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ড. হরিণী অমরাসুরিয়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। তিনি সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় শ্রীলঙ্কায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রকাশিত সহমর্মিতা, সংহতি ও সহায়তার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী অধ্যাপক ইউনূসকে ফোন করেন। আলাপের শুরুতেই তিনি উল্লেখ করেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চলা ভয়াবহ দুর্যোগে তাদের দেশ অভূতপূর্ব ক্ষতির মুখে পড়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়, পাহাড় ধস, দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা ও বন্যায় শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং বহু অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়েছে। জরুরি উদ্ধার তৎপরতা চললেও এখনো অনেক এলাকা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

“বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ” 01612346119

ড. হরিণী অমরাসুরিয়া বলেন, সংকটের মুহূর্তে বাংলাদেশের দ্রুত সহানুভূতি ও মানবিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা শ্রীলঙ্কার জনগণকে সাহস জুগিয়েছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো বার্তা এবং সহায়তার প্রতিশ্রুতি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।

টেলিফোনালাপে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস শ্রীলঙ্কার এই দুর্যোগে গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনোই শুধুমাত্র একটি দেশের সমস্যা নয়। আঞ্চলিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে এবং মানবিক দায়িত্ব থেকে বাংলাদেশ সবসময় শ্রীলঙ্কার পাশে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, “যা কিছু প্রয়োজন, বাংলাদেশ তা করতে প্রস্তুত। যদি শ্রীলঙ্কা চায়, আমরা অতিরিক্ত জরুরি সহায়তা, চিকিৎসা ও উদ্ধারকর্মী এবং দুর্যোগ-প্রতিক্রিয়া বিশেষজ্ঞ দল পাঠাতে পারি।” তার মতে, দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দিতে পারা এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ পাঠানো আঞ্চলিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী জানান, তাদের সরকার বর্তমানে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান ও পুনর্গঠন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে। একাধিক জেলা এখনো পানিবন্দী। বহু সড়ক, সেতু, ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং বাংলাদেশের প্রস্তাবিত সহায়তা সেদিক থেকে বড় ভূমিকা রাখবে।

আলোচনার একপর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, দু’দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা একে অপরের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার সংকট ব্যবস্থাপনা এবং পুনর্গঠনের অভিজ্ঞতা থেকেও শিখতে আগ্রহী।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরুতে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে সরাসরি সাক্ষাৎ হয়। সেই সাক্ষাৎ থেকেই দুই দেশের নতুন ধরনের সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল বলে প্রেস উইং জানিয়েছে।

টেলিফোন আলোচনার সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালক। তারা আলোচনার বিভিন্ন কারিগরি দিক নোট করেন এবং সম্ভাব্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে প্রাথমিক মতবিনিময় করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *