নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি কনভেনশন একসঙ্গে অনুসমর্থন করার সিদ্ধান্ত একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই সিদ্ধান্ত শ্রমিকদের অধিকার, কর্মস্থলের নিরাপত্তা ও পেশাগত স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি অভিহিত করেছেন। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে স্মরণীয় করে রাখতে বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমি, স্টেট গেস্ট হাউস ‘সুগন্ধা’য় এক বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইএলও বাংলাদেশ যৌথভাবে এই উদযাপন করে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এ অর্জন কেবল একটি আইনি মাইলফলক নয়—এটি বিশ্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা যে, আমাদের শ্রমিকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় আমাদের অঙ্গীকার দৃঢ়। এই পদক্ষেপ আমাদের সরকারের দূরদর্শিতা ও পরিকল্পনার প্রতিফলন, যা বাংলাদেশের এলডিসি (নীচের উন্নয়নশীল দেশ) থেকে উত্তরণের প্রস্ততিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই সিদ্ধান্ত বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের নৈতিক ও টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই তিনটি কনভেনশনের মধ্যে কনভেনশন নং ১৫৫ (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য) এবং কনভেনশন নং ১৮৭ (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রচারমূলক কাঠামো) আইএলও’র মৌলিক কনভেনশন। এর পাশাপাশি, কনভেনশন নং ১৯০ (কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ) অনুসমর্থনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে আইএলও’র ১০টি মৌলিক কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশে পরিণত হয়েছে। এটি দেশের শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় নতুন এক যুগের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া বলেন, এই কনভেনশন বাস্তবায়নে আরও জোরদার করা হবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যক্রম, যাতে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। তিনি উল্লেখ করেন, শ্রমিকের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই উদ্যোগের ফলে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত হবে এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসমর্থন এবং এই উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি আরও সুদৃঢ় হবে। তিনি বলেন, এই অগ্রগতি দেশের বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সহায়তা করবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ তার আন্তর্জাতিক বাজারে সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।
বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ম্যাক্স টুনোন এই অনুসমর্থনকে ‘একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের শ্রমিক কল্যাণের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ডে দেশের উন্নয়নকে আরও শক্তিশালী করবে।
উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর যমুনা স্টেট গেস্ট হাউসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে শ্রম উপদেষ্টা এই তিনটি কনভেনশনের অনুসমর্থনপত্রে স্বাক্ষর করেন। এরপর, ২১ নভেম্বর আইএলও’র জেনেভাস্থ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ৩৫৫তম গভর্নিং বডি অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অনুদানের দলিল হস্তান্তর করা হয়। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের শ্রমিক ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা দেশের শ্রমবাজারের আন্তর্জাতিক মানোন্নয়ন ও শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিষয়ক অ্যাটাসে লিনা খান, টিসিসির (টেকনিক্যাল কোঅপারেশন ইনিশিয়েটিভ) সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এই উদ্যোগ বাংলাদেশে শ্রম ও নিরাপত্তা উন্নয়নে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

01612346119