নিজস্ব প্রতিবেদক
বস্ত্র, পাট, বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, পাটশিল্পের মতো বস্ত্র খাতে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আবেগের বশবর্তী না হয়ে বাস্তবমুখী ও সুসংগঠিত পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করা সম্ভব। এই লক্ষ্য পূরণে শিল্প, একাডেমিয়া ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টারে (জেডিপিসি) ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস-২০২৫’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বস্ত্র শিল্প একটি কমোডিটি ইন্ডাস্ট্রি। এখানে কাঁচামালের দাম উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ। বাকি ২০ শতাংশ থেকেই মুনাফা করতে হয়। তাই এখানে দক্ষতা ছাড়া অগ্রগতি সম্ভব নয়। দক্ষতার উন্নয়ন ও মানোন্নয়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, অন্যথায় শিল্প পিছিয়ে পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, টেক্সটাইল শিক্ষার মান ও শিল্পের চাহিদার মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘বর্তমানে আমাদের টেক্সটাইল শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ফাংশনাল ও কর্মক্ষম। তবে একাডেমিয়া ও শিল্পের মধ্যে সংযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার অভাবে পিছিয়ে পড়ে। আমাদের বিশাল জনসংখ্যা—১৮ কোটি মানুষকে দক্ষ করে তুলতে পারলে, আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হব।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব বিলকিস জাহান রিমি সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্বাস উদ্দিন। বক্তারা বলেন, দেশের বস্ত্রখাতে দক্ষ ও যুগোপযোগী শ্রমশক্তি তৈরিতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে, শিল্পের অগ্রগতি ও শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নয়নের জন্য আরও উদ্যোগী হতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট শওকত আজীজ রাসেল, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আরিফুর রহমান খান, অতিরিক্ত সচিব সুব্রত শিকদার, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কবির উদ্দিন সিকদার, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু আহমদ ছিদ্দীকী, জেডিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহিদ হোসেনসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শিল্পোদ্যোক্তারা। তারা জানান, দেশের বস্ত্র ও পাট শিল্পের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন আরও কার্যকর পদক্ষেপ।
সার্বিকভাবে, এই সেমিনার ও আলোচনাগুলো দেশের বস্ত্রখাতে টেকসই অগ্রগতি ও দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বস্ত্র ও পাট শিল্পের ভূমিকা অপরিহার্য, এবং এর সঠিক উন্নয়নে সকল অংশীজনের একযোগে কাজ করা আবশ্যক।
