ভুলুয়া ব্রিজ ঘিরে কমলনগরে নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠছে

আবু সালমান

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চর কাদিরায় ভুলুয়া নদীর ওপর নির্মিত ‘ভুলুয়া ব্রিজ’ ঘিরে গড়ে উঠছে নতুন এক পর্যটন কেন্দ্র। জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় স্পটে পরিণত হওয়া এই স্থানে প্রতিদিন ভিড় করছেন হাজারো দর্শনার্থী। শুধু লক্ষ্মীপুর নয়—নোয়াখালী, ফেনী ও চাঁদপুর থেকেও পর্যটকরা ছুটে আসছেন ব্রিজ ঘিরে তৈরি হওয়া মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবি ও ভিডিওর কারণে জায়গাটি নিয়ে মানুষের কৌতূহল ও আগ্রহ বেড়েছে কয়েকগুণ।

ভুলুয়া এখন ‘গরিবের টাঙ্গুয়ার হাওর’

গত শনিবার (৭ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকাজুড়ে প্রায় ৬-৭ হাজার মানুষের ঢল। কেউ জায়গাটিকে বলছেন ‘গরিবের টাঙ্গুয়ার হাওর’, কেউবা ডাকছেন ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে। ব্রিজের দুই পাশে সবুজ চর, বর্ষার পানিতে টইটম্বুর নদী এবং নৌকা-বোটের চলাচল—সব মিলে সৃষ্টি হয়েছে এক নৈসর্গিক পরিবেশ। নদীতে ঘুরে বেড়ানোর জন্য মাত্র ২০ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে নৌকা ও স্পিডবোট। কেউ কেউ নদীতে সাঁতার কাটছেন, অনেকে আবার মাছ ধরছেন কিংবা খেলাধুলায় মেতে উঠছেন।

যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন

স্থানীয়রা জানান, আগে চর কাদিরার দুই পাড়ে যাতায়াত ছিল খুবই কষ্টসাধ্য। বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগ একপ্রকার বন্ধ হয়ে যেত। ২০২৪ সালের ২৪ মে এলজিইডির বাস্তবায়নে ৬০ মিটার দীর্ঘ ‘ভুলুয়া ব্রিজ’ নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়। এর আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহর ব্যক্তিগত অর্থায়নে একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল, যা পরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অকার্যকর হয়ে যায়।

ভাইরাল ভিডিও, নিরাপত্তা, ও ব্যবসার সুযোগ

স্থানীয় ব্লগার সোহেল তানভীর ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর আফরোজ হৃদয়ের ভিডিও ও কনটেন্ট ভাইরাল হওয়ার পরই জায়গাটি আলোচনায় আসে। পর্যটক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মেম্বার মহিন উদ্দিনের উদ্যোগে নিরাপত্তার জন্য গ্রাম পুলিশের টহল চালু করা হয়। ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বসেছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। চা-বিস্কুট, খাবার ও খেলনা বিক্রি করে উপার্জনের সুযোগ পেয়েছেন স্থানীয়রা। তবে দুপুরের পর অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে ব্রিজের দুই পাশে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দেয়। এছাড়া, চলাচলের রাস্তার বেহাল অবস্থাও বাড়াচ্ছে দুর্ভোগ।

নদী খননের দাবি ও উদ্যোগ

স্থানীয়দের দাবি, ভুলুয়া নদী খনন করা হলে পর্যটনের পাশাপাশি কৃষি ও স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রাণ ফিরে আসবে। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান জানান, ভুলুয়া নদীর ১৮ কিলোমিটার খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে। অন্যদিকে, কমলনগরের ইউএনও নদীর দুই পাশে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন।

কীভাবে যাবেন ভুলুয়া ব্রিজে?

ভ্রমণপ্রেমীরা লক্ষ্মীপুর শহরের ঝুমুর বা দক্ষিণ তেমুহনী থেকে বাস বা সিএনজি করে যেতে পারেন করইতলা পর্যন্ত। সেখান থেকে রববাজার সরকারি পুকুর পাড়ের পথ ধরে গেলেই দেখা মিলবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নতুন পর্যটন আকর্ষণ—‘ভুলুয়া ব্রিজ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামযের সময়সূচি