উন্নত বিশ্বের সহযোগিতা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সম্ভব নয়: পরিবেশ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বকে বাড়তি অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, টেকসই অভিযোজন নিশ্চিত করতে খণ্ডকালীন ও সীমিত প্রকল্পের পরিবর্তে কৃষি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় ব্যবস্থাপনাসহ সব খাতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।

গত বুধবার ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ‘রেজিলিয়েন্স ফর অল: ক্যাটালাইজিং ট্রান্সফরমেশনাল অ্যাডাপ্টেশন’ শীর্ষক ৯ম এশিয়া-প্যাসিফিক ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপ্টেশন ফোরামের মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান উল্লেখ করেন, সাহসী পদক্ষেপ ও উদ্ভাবনী কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশ গত কয়েক দশকে শুধু জীবন রক্ষাই করেনি, বরং ভূমি, পানি, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় সম্পদও সুরক্ষিত করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় আটটি ক্ষেত্রে ১১৩টি কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এছাড়া বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড বিশ্বের প্রথম দেশীয় অভিযোজন তহবিল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কার্যকরভাবে কাজ করছে। দুর্যোগ প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ৭৮ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে, যাদের অর্ধেক নারী। স্থাপন করা হয়েছে ৪ হাজার ২৯১টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও ৫২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ উদ্ধার নৌযান এবং উপকূলীয় অঞ্চলে কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

খাদ্য নিরাপত্তায় বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, খরা, লবণাক্ততা ও জলমগ্ন সহনশীল ধান প্রজাতি উদ্ভাবন করা হয়েছে এবং ভাসমান কৃষি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চল ও হাওরাঞ্চলে প্রকৃতিনির্ভর অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার হাওরের সহ-ব্যবস্থাপনা জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা সুরক্ষায় মডেল হিসেবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, অভিযোজন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি হলো— শক্তিশালী নীতি ও শাসনব্যবস্থা, জনগণভিত্তিক নেতৃত্ব এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন। সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ এ ক্ষেত্রে আইনগত ভিত্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের উদ্ভাবন ও স্বেচ্ছাসেবক নেটওয়ার্ক মানুষকেন্দ্রিক অভিযোজনের বাস্তব উদাহরণ তৈরি করেছে।

এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, জিইএফ, জিসিএফ, এলডিসিএফ ও অ্যাডাপ্টেশন ফান্ডের মতো বৈশ্বিক তহবিল বাংলাদেশের অভিযোজন সক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
মন্ত্রীপর্যায়ের এ বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন— জাপানের গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক উপমন্ত্রী ডোই কেনতারো, ব্রিটিশ হাইকমিশন দিল্লির ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওনাল ডিপার্টমেন্টের প্রধান জন ওয়ারবার্টন, ইউএনইপি এশিয়া-প্যাসিফিক অফিসের আঞ্চলিক পরিচালক দেচেন সেরিং, ফিলিপাইনের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের সহকারী সচিব নোরালেন উয় এবং এডিবি থাইল্যান্ড রেসিডেন্ট মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর আনুজ মেহতা।

One thought on “উন্নত বিশ্বের সহযোগিতা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সম্ভব নয়: পরিবেশ উপদেষ্টা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামযের সময়সূচি