
এস.এম. বাদল
মিরপুর (কুষ্টিয়া)
কৃষক ও কৃষির সমস্যাই মূলত জাতীয় সমস্যা**”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি, মিরপুর উপজেলা কমিটির উদ্যোগে এক কৃষক সম্মেলন ও উপজেলা কমিটির ৪র্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর ২০২৫) দুপুরে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আহ্বায়ক *আসাদুল ইসলাম আসাদ*। প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক বি. এম. শামিমুল হক।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ ও কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক *মোকতারুল ইসলাম মুক্তি*, জেলা সভাপতি *আবুল কাসেম*, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা সহ-সভাপতি *অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী*, জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক *সোলায়মান পারভেজ*, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি রমজান বিশ্বাস, এবং গীতিকার ও সুরকার আজব আলী প্রমুখ। সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এতে আসাদুল ইসলাম আসাদ সভাপতি, আব্দুর রহমান সাধারণ সম্পাদক এবং সোলেমান শাহ সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৭ সদস্যবিশিষ্ট নতুন উপজেলা কমিটির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দকে শপথ করান প্রধান অতিথি বি. এম. শামিমুল হক।
বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি কৃষি হলেও কৃষকরা আজ নানা সংকটে জর্জরিত। ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, সার ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকট ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে কৃষক সমাজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অথচ কৃষকের পরিশ্রম ও ঘামের ওপরই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভর করছে। তাঁরা অভিযোগ করেন, সরকার কৃষকের ন্যায্য অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। বক্তাদের মতে, দেশের প্রকৃত উন্নয়ন তখনই সম্ভব, যখন কৃষক শ্রেণির স্বার্থরক্ষা ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সম্মেলনে কৃষি বিপ্লবের লক্ষ্যে কৃষক সংগ্রাম সমিতির ঘোষিত ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের জোর আহ্বান জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো—
১. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা;
২. কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ;
৩. ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে খাসজমি বণ্টন;
৪. কৃষিঋণ প্রাপ্তি সহজলভ্য করা;
৫. জিকে খালে সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা;
৬. ভূমি অফিসের দুর্নীতি বন্ধ করা;
৭. কৃষি উপকরণের দাম নিয়ন্ত্রণ ও ভর্তুকি বৃদ্ধি।
বক্তারা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন ও জাতীয় সম্পদের বিদেশীকরণের বিরোধিতা করে বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর স্বার্থে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তাঁরা শ্রমিক-কৃষকের ঐক্যের ভিত্তিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “শ্রমিক-কৃষকের ঐক্যই কৃষক ও কৃষির মুক্তির একমাত্র পথ।” সম্মেলন শেষে সংগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে শতাধিক কৃষক এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনের শেষে সংগ্রামী অভিনন্দন জানান সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রহমান।