জামায়াতের মহিলা কর্মীকে জবাই ও উলঙ্গ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি

মহিউদ্দিন সুজন
নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা শাখার এক কর্মীকে জবাই করে হত্যা ও উলঙ্গ করে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের একদল কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তাজ নাহার বেগম সুমি (৩৮) নোয়াখালী সুধারাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, “আমাকে ও আমার সন্তানদের জবাই করে হত্যার পর উলঙ্গ করে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।”

ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে। অভিযোগ অনুযায়ী, নোয়াখালী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম করিমপুর এলাকায় তার বাড়ির উঠানে জামায়াতে ইসলামীর মহিলা শাখার উদ্যোগে নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী এএসএম ইসহাক খন্দকারের নির্বাচনী উঠান বৈঠক চলছিল।
এ সময় একই এলাকার স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী গোলাপ নূর রোমান, মো. হোসেন বাবলু, রুবেলসহ ১০–১১ জন মোটরসাইকেলযোগে সেখানে গিয়ে বৈঠকে বাধা দেয়। তারা বৈঠকে উপস্থিত ৩০–৩৫ জন নারীকে হুমকি ও লাঞ্ছিত করে বৈঠক বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগে বলা হয়।

ভুক্তভোগীর ভাষ্য অনুযায়ী, “২ নম্বর আসামি আমার ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে এখানে কী মিটিং চলছে? এরপর হুমকি দিয়ে বলে, ‘আর যদি জামায়াতের মিটিং হয়, তাহলে তোকে ও তোর সন্তানদের জবাই করে ফেলব, এমনভাবে রাখব যেন জামায়াত তো দূরের কথা, মশা-মাছিও টের না পায়।’” অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ১ নম্বর আসামি গোলাপ নূর রোমান ও এক অজ্ঞাত সহযোগী মোটরসাইকেলে এসে আবারও হুমকি দেয়—“আমি যদি জামায়াতের কোনো বৈঠক করি বা আইনি পদক্ষেপ নিই, তাহলে পুরো পরিবারসহ জবাই করে ফেলা হবে।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত গোলাপ নূর রোমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক। জামায়াতের বৈঠক নিয়ে আমার আপত্তি ছিল না। কিন্তু আমার আপত্তি ছিল ওই বাড়ির উঠানে কেন মিটিং করা হচ্ছে, সেটি নিয়ে।” ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নোয়াখালী জেলা আমির ও সম্ভাব্য প্রার্থী এএসএম ইসহাক খন্দকার বলেন, “স্বেচ্ছাসেবক দলের এই হামলা ও হুমকি দেশের ইতিহাসে স্বৈরাচারী সময়ের নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোর স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। সুবর্ণচর ও বেগমগঞ্জের নারীদের ওপর চালানো বর্বরতার পুনরাবৃত্তি যেন ঘটছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ করেছে। আশা করি প্রশাসন দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করবে। অতীতেও ফ্যাসিবাদ প্রতিহত হয়েছে, এখনো হলে আমরা শক্ত হাতে প্রতিরোধ করব।”

এ বিষয়ে জানতে নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো বলেন, “যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবারই রাজনৈতিক কর্মসূচি করার অধিকার রয়েছে—এ ধরনের হুমকি বা সহিংসতা মেনে নেওয়া হবে না।” ঘটনা বিষয়ে সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলামকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামযের সময়সূচি