“ভারতীয় মথ ডালে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল, ঝুঁকিতে ভোক্তা”

অসাধু আমদানিকারকদের প্রতারণায় বিপদে নিম্নআয়ের ভোক্তারা, প্রশাসনের নজরদারির দাবি

মোঃ রাকিবুল ইসলাম
রাজশাহী প্রতিনিধি

ভারত থেকে আমদানি করা মথ (MOTH) ডালে মেশানো হয়েছে ক্ষতিকারক রং ও কেমিক্যাল— যা পরে ‘মুগ ডাল’ নামে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। এতে সাধারণ ক্রেতারা যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে, বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ।

আমদানিকারকদের অনিয়মে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি

কোয়ারেন্টাইন স্থলবন্দরের উপপরিচালকরা জানিয়েছেন, অতি মুনাফার আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ অপকর্মে জড়িত। তাদের তথ্য অনুযায়ী, এসব কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল বাংলাদেশে মুগ ডাল হিসেবে পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস আই এম রাজিউল ইসলাম এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবু তালেব বলেন,

“ল্যাব রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতীয় মথ ডালে যে কেমিক্যাল মেশানো হয়েছে তা লিভারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে হজমের সমস্যা, বদহজম, পেট ফাঁপা এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে।” রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আক্তার জানান, “ল্যাব রিপোর্টে ক্ষতিকারক কেমিক্যালের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মুগ নয়, মথ— প্রতারণার ফাঁদে ভোক্তা

বাংলাদেশে মুগ ডাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হলেও মথ ডাল কেবল ভারতে উৎপাদিত হয়। সরকার কেমিক্যালমুক্ত মথ ডাল আমদানির অনুমতি দিলেও কিছু ব্যবসায়ী রং ও কেমিক্যাল মিশিয়ে আমদানি করে তা মুগ ডাল হিসেবে বাজারজাত করছে। তথ্য অনুযায়ী, ভারতে কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল মানুষের খাদ্য হিসেবে নিষিদ্ধ, এবং এটি গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলো চলতি বছরে প্রায় ৭,৭৭৭ মেট্রিক টন কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল আমদানি করেছে—

  • বিসমিল্লাহ ফ্লাওয়ার মিল
  • বিসমিল্লাহ ডাউন মিল
  • নিঝুম শস্য ভান্ডার
  • এম এ ট্রেডিং
  • শ্যামলী ডাউন মিল
  • বাবর ডাবল মিল
  • মেসার্স সালমান খুরশিদ ডাউল মিল

দায় এড়াচ্ছে কোয়ারেন্টাইন কর্তৃপক্ষ

কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তারা জানান, তাদের দায়িত্ব শুধু পোকামাকড় ও প্যাকেটজনিত পরীক্ষা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ, কেমিক্যাল পরীক্ষার ল্যাব বা জনবল তাদের নেই। তাদের মতে, এই বিষয়ে পরীক্ষা করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিএসটিআইয়ের। বিএসটিআই রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক জহরুল সিকদার বলেন, “মথ ডাল আমাদের অনুমোদিত ৩১৫টি খাদ্যপণ্যের তালিকায় নেই। সরকার তালিকাভুক্ত করলে আমরা ল্যাব টেস্ট করে ব্যবস্থা নিতে পারব।”

“অতি মুনাফার ফাঁদে বিপদে মানুষ”

বিভিন্ন স্থলবন্দরের কোয়ারেন্টাইন উপপরিচালকরা (সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, হিলি, বেনাপোল, ভোমরা) একমত হয়ে বলেন, “অতি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা ভারতীয় মথ ডালে কেমিক্যাল মিশিয়ে প্রতারণা করছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।” তারা জানান, বিষয়টি দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

আমদানি বন্ধের উদ্যোগ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং-এর অতিরিক্ত উপপরিচালক বনি আমিন খান ও স্থলবন্দর জনসংযোগ কর্মকর্তা রায়হান কবির বলেন,

“ল্যাব টেস্টে কেমিক্যাল প্রমাণিত হয়েছে। তাই আমদানির আইপি (Import Permit) বন্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *