নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে ইসির কঠোর মনোভাব, সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিস্তারের সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কঠোর প্রস্তুতি শুরু করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন গত ২০ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রাক-নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক সভায় স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, নির্বাচন পরিচালনা একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং এর সফলতার জন্য সবার সম্মিলিত সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্রবাহিনী, আনসার-ভিডিপি, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য।

“বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ” 01612346119

সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটার ও নির্বাচনী কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের হিংসা, কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, ভোটাধিকার ব্যাহত করার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সেনাবাহিনী নির্বাচনের আগে, দিনে ও পরবর্তী চার দিনসহ মোট আট দিন মোতায়েন থাকতে পারে। সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেয়েছে এবং প্রয়োজনে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করলে তারা আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। নির্বাচনী দায়িত্বে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনা সদস্য অংশ নিতে পারে, এবং নির্বাচনী মালামাল পরিবহন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নিরাপত্তায় হেলিপ্যাড, আর্মি এভিয়েশন ও কমান্ডো মোতায়েন রাখা হবে।

আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক জানান, এবারের নির্বাচনে নতুনভাবে অভিজ্ঞ সদস্যদের বাছাই ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারীদের জন্য কিউআর কোডযুক্ত পরিচয়পত্র, নির্ধারিত অস্ত্র ও পোশাক সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। বিমানবাহিনী নির্বাচন সংক্রান্ত জনবল ও সরঞ্জাম পরিবহনের জন্য প্রস্তুত থাকবে। স্বরাষ্ট্র সচিব প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বডিওর্ন ক্যামেরা বসানোর এবং আশপাশের দোকানেও রেকর্ডিং রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।

পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, কোস্টগার্ড ও এসবি সংস্থাগুলো নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নিরাপত্তা পরিকল্পনায় রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোন বিভাজন, ড্রোন ব্যবহার, সীমান্ত সুরক্ষা এবং গুজব প্রতিরোধের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সমন্বয় অপরিহার্য এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সুসমন্বয় থাকতে হবে। কমান্ড কন্ট্রোল ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় নিশ্চিত করা হবে এবং অবৈধ অস্ত্র, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও কালো টাকা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সিইসি স্পষ্ট করেন, নির্বাচন কমিশন কোনো গোপন নির্দেশনা দেবে না, সব নির্দেশনা আইন ও বিধি মোতাবেক প্রকাশ্যে দেওয়া হবে। বাহিনীগুলোকে পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা এবং প্রো-অ্যাকটিভ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এছাড়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্যাবোটাজ বা হিংসা প্রতিরোধে সকল বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নির্বাচনকে সফল ও আস্থাভিত্তিক করার লক্ষ্যে কমিশন সকল প্রতিষ্ঠান ও বাহিনীর সাথে সমন্বয় বজায় রেখে কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *