বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আহ্বান : উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবিলম্বে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু ঘোষণা দিলেই হবে না, শিক্ষার্থীদের সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করা, নিয়মিত সচেতনতা কার্যক্রম চালানো এবং প্লাস্টিকের সহজলভ্য টেকসই বিকল্প নিশ্চিত করাই সফলতার মূল চাবিকাঠি। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের পাট, কাগজ বা কাপড়ের ব্যাগ তৈরির সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি। তার মতে, তরুণ প্রজন্ম যদি মুনাফানির্ভর মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের দিকে এগিয়ে আসে, তবে তা শুধু প্লাস্টিক দূষণ কমাবে না, বরং স্থানীয় শিল্প যেমন পাট শিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে, দেশের অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে এবং টেকসই উৎপাদনব্যবস্থার দিকে যাত্রা ত্বরান্বিত হবে।

“বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ” 01612346119

তিনি শনিবার রাজধানীর বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) আয়োজিত “টেকসই প্লাস্টিকমুক্ত সামুদ্রিক পরিবেশ” শীর্ষক অ্যাওয়ারনেস বিল্ডিং অ্যান্ড ডিসেমিনেশন ক্যাম্পেইনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, প্লাস্টিক থেকে বিকল্প ব্যবহারে যাওয়া সহজ নয়। কয়েক দশকে তৈরি হওয়া ভোক্তা-আচরণ রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়। তাই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বাদ দিতে এবং প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, প্রাতিষ্ঠানিক অঙ্গীকার ও নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ব্যাপকভাবে প্লাস্টিক ব্যবহারের পেছনে ভোক্তাদের সুবিধাভিত্তিক মনোভাব এবং প্লাস্টিককে “ফ্রি” ভাবার ভুল ধারণা কাজ করেছে। বাস্তবে প্লাস্টিক উৎপাদনে শ্রম, বিদ্যুৎ, বিদেশি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালসহ অনেক ব্যয় থাকে, আর এর গোপন মূল্য পরিবেশকে দিতে হয় দূষণ ও প্রতিবেশগত ক্ষতির মাধ্যমে। উপদেষ্টা চার বছর মেয়াদি সফল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আয়োজকদের প্রশংসা করেন এবং প্রকল্প সম্প্রসারণ পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, আজ যেসব পরিবেশ শিক্ষা শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে, ভবিষ্যতের পরিবেশ-ব্যবস্থাপনা তার ওপরই নির্ভর করবে। তাই অতীত প্রজন্মের টেকসই জীবনধারা, প্লাস্টিক ত্যাগের সুফল এবং দায়িত্বশীল ভোক্তা আচরণের গুরুত্ব জানানো খুব জরুরি।

বঙ্গোপসাগর বিশ্বের নবম সর্বাধিক প্লাস্টিকদূষিত সামুদ্রিক অঞ্চল হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহারই এর প্রধান কারণ নয়। বরং দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নদীপথে উজান থেকে ভেসে আসা বর্জ্য এবং সমন্বিত পদক্ষেপের অভাব এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, পুনর্ব্যবহার জনপ্রিয় হলেও এটি জ্বালানি-নির্ভর ও রসায়নগতভাবে জটিল। তাই প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি পণ্যগুলোকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রাখা এবং উৎপাদকদের ওপর দায়িত্ব আরোপ করাটাই জরুরি।

অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া এবং কুয়েট উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মাকসুদ হেলালী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়েট সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আসিফুল হক, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. রিয়াজ আকতার মল্লিক। সভাপতিত্ব করেন চুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সায়েন্টিফিক ডিরেক্টর প্রফেসর ড. ম. ফারজানা রহমান জুথি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *