শেখ হাসিনার মামলায় রাজসাক্ষী মামুন ট্রাইব্যুনালে হাজির

নিজস্ব প্রতিবেদক

চব্বিশের জুলাই–আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে যে মামলা বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং রাজসাক্ষী হিসেবে যুক্ত সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে রায় ১৭ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এই তারিখ নির্ধারণ করেন। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও মামলার বিচারিক অগ্রগতি দেখায় যে রাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।

“বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ” 01612346119

মামলায় পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ। প্রসিকিউশন অভিযোগ তুলেছে—জুলাই–আগস্টের অভ্যুত্থান ঠেকাতে সরকার পদ্ধতিগতভাবে সহিংসতা ব্যবহার করেছিল এবং প্রশাসন ও দলীয় বাহিনীর বিভিন্ন অংশ এতে যুক্ত ছিল। তাদের দাবি, এই সহিংসতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না, বরং ছিল কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও অনুমোদনের অংশ। সেই প্রেক্ষিতে তারা শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।

অন্যদিকে, পলাতক দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা দাবি করেছেন যে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অভিযুক্তদের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ দুর্বল। রাজসাক্ষী হিসেবে দোষ স্বীকারকারী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সাক্ষ্য মামলার কাঠামোয় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তার স্বীকারোক্তি এই মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে বদলে দিয়েছে এবং অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়িয়েছে।

মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এটি শুধু তিনজন ব্যক্তির বিচার নয়, বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রয়োগ, জবাবদিহিতা এবং গণঅধিকার লঙ্ঘনের বিচার। গনঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের পিতা ও অন্যান্য স্বজনদের সাক্ষ্য ঘটনাটির মানবিক দিক তুলে ধরে। একই সঙ্গে নাহিদ ইসলাম ও ড. মাহমুদুর রহমানের মতো স্টার উইটনেসদের সাক্ষ্য রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ঘটনার ধারাবাহিকতা স্পষ্ট করে।

জুলাই–আগস্টে যে সহিংসতা ঘটেছিল, তা দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দেয়। অভিযোগ রয়েছে যে সরকার সমর্থিত বাহিনী পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত অভিযানে সাধারণ মানুষ, ছাত্র এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। এসব অভিযোগ বিচারাধীন থাকলেও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই মামলার রায় ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার রোধে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারে। একই সঙ্গে এটি দেশের বিচারব্যবস্থা কতটা স্বাধীন ও কার্যকর, তারও একটি পরীক্ষা।

এই মুহূর্তে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অনুরূপ অভিযোগের বিচার চলছে। ফলে ১৭ নভেম্বরের রায় শুধু একটি মামলার সমাপ্তি নয়; এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের ইতিহাসে একটি বড় সিদ্ধান্ত হয়ে আসতে পারে। রায়ের ওপর নির্ভর করবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ক্ষমতার ভারসাম্য, এবং রাষ্ট্রের মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি কতটা দৃঢ় থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *