গণপূর্ত ভবনের সেমিনারে বক্তব্য দেন পরিবেশ উপদেষ্টা রোববার।

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি ভবনগুলোকে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও টেকসই গ্রিন বিল্ডিংয়ে রূপান্তরের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। রোববার রাজধানীর গণপূর্ত ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, গ্রিন প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড গ্রিন বিল্ডিং’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি বলেন, এখনই সরকারকে নির্মাণশিল্পে বড় ধরনের নীতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি গণপূর্ত অধিদপ্তরকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ গ্রিন বিল্ডিং ম্যানুয়াল প্রস্তুত করার নির্দেশ দেন এবং স্পষ্ট করে বলেন, কোনো মন্ত্রণালয় বা দপ্তর এই নীতির বাইরে থাকতে পারবে না। বাধ্যতামূলক নীতিমালা থাকলে সরকারি ভবনগুলোতে কম পানি ব্যবহার, পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো, শক্তি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং পরিবেশসম্মত নকশা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

“বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ” 01612346119

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, দেশের নির্মাণ খাত আধুনিক মানে উন্নীত করতে হলে পুরোনো ধ্যানধারণা বদলাতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, লেক ও জলাশয়গুলো ড্রেনেজ ব্যবস্থার অংশ নয়, এগুলো মানুষের এবং প্রকৃতির। সুতরাং উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংস, জলাশয় ভরাট বা বাণিজ্যিক দখল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার ও স্থানীয় কমিউনিটির দায়িত্ব আলাদা, আর তা স্পষ্ট না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

ইটভাটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ধানি জমিতে স্থাপিত অবৈধ ইটভাটার আগুন ও ধোঁয়ার কারণে দেশের সবুজায়ন ধ্বংস হচ্ছে এবং বায়ুদূষণ ভয়াবহভাবে বাড়ছে। বর্তমান সরকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দিয়েছে, কিন্তু তবুও এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। শুধু আইন প্রয়োগে সমস্যা কাটবে না, বরং ইটের বিকল্প প্রযুক্তি ও উপকরণ জনপ্রিয় করতে হবে। তিনি ব্লক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন এবং রাজউককে ভবন নির্মাণে নির্দিষ্ট শতাংশ ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, সরকারি হাসপাতাল, কারাগার, আদালত এবং এতিমখানাসহ বহু সরকারি ভবনের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এগুলোকে পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ ও আধুনিক কাঠামোয় পুনর্গঠন করা জরুরি। তিনি শহরের জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার, ভরাটকৃত খাল পরিষ্কার এবং সরকারি ভবনকে পরিবেশ সহায়ক হিসেবে পুনর্নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সব মিলিয়ে, সেমিনারে বক্তারা মনে করেন সরকারি ভবনগুলোকে গ্রিন বিল্ডিংয়ে রূপান্তর করা শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই নগরায়ণের পথে এগিয়ে যাওয়ার একটি অপরিহার্য শর্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *