অন্তর্বর্তী সরকার প্রায় সব লক্ষ্যই অর্জন করেছে বলে জানান প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে কিছু মহল যে দাবি করছে—এটি নাকি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন—প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম সেই মন্তব্য স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি মনে করেন, বাস্তবে সরকার মাত্র ১৫ মাসেই তাদের প্রায় সব লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক দীর্ঘ বিবৃতিতে তিনি লিখেছেন, এটি গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারগুলোর একটি, যাদের কর্মদক্ষতা এবং অল্প সময়ে বাস্তবায়িত সংস্কারের পরিমাণ ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

“বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ” 01612346119

কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছে যে এই সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে অদক্ষ, কিন্তু শফিকুল আলমের মতে এমন অভিযোগ বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরেছে এবং বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক হামলাও বন্ধ হয়েছে, যা সরকারের কঠোর অবস্থান ও নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিফলন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক সুবিধা বিষয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, লবিং ফার্ম ভাড়া না করেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করা সম্ভব হয়েছে, যা কূটনৈতিক সাফল্যের একটি বড় উদাহরণ। তিনি বলেন, মাত্র ১৫ মাসে রেকর্ড সংখ্যক আইন পাস হয়েছে, যার মধ্যে বিস্তৃত শ্রম সংস্কার আইনও রয়েছে, যা ভবিষ্যতের শ্রমবাজার ও শিল্পখাতকে আরও আধুনিক ও প্রতিযোগিতামূলক করতে সহায়তা করবে। জুলাই ঘোষণা এবং জুলাই সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে নতুন করে সাজানোর একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতি তৈরি করার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, ফলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলার অপব্যবহার বা জামিন নিয়ে কারসাজি করা কঠিন হবে।

তিনি জানান, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বন্দর অপারেটর লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা বাংলাদেশের শিল্পখাতের রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং এটি এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় বিনিয়োগ। নতুন পররাষ্ট্রনীতি কাঠামো দেশের অবস্থানকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি দাবি করেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে, প্রবৃদ্ধি পুনরায় গতি পেয়েছে, ব্যাংকিং খাতের লুটপাট ঠেকানো হয়েছে, টাকা স্থিতিশীল রয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসছে—যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, অতীতের নিপীড়নের জন্য জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, গুম বন্ধ হয়েছে, চরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিষ্ক্রিয় হয়েছে এবং সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ দেখা দিচ্ছে, যার প্রমাণ জনপ্রিয় প্রামাণ্যচিত্রগুলো। র‌্যাব এখন আইনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি থেকে সরে এসেছে। গত ১৬ মাসে একটিও সাজানো ক্রসফায়ারের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতাও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বলেন, ইতিহাসের একজন আগ্রহী পাঠক হিসেবে তার বিশ্বাস—বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্প সময়ে কোনো সরকার এত সাফল্য দেখাতে পারেনি, যতটা এই অন্তর্বর্তী সরকার করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *