অন্তর্বর্তী সরকার রিটের লিভ আবেদনও আপিল বিভাগ খারিজ।

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স ও মতামত প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলও খারিজ করেছে আপিল বিভাগ। এর ফলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন প্রক্রিয়া আইনগতভাবে বৈধ বলে নিশ্চিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই আদেশ দেন।

“বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ” 01612346119

লিভ টু আপিলের পক্ষে শুনানি করেন আপিলকারী সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ। অন্যদিকে ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত হওয়া লেখক ফিরোজ আহমেদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। তাদের সঙ্গে আরও যুক্ত হয়ে শুনানি করেন বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

আদালতের এই রায় দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি আরও দৃঢ় করেছে বলে আইনজীবীরা মনে করছেন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চান। পরিস্থিতি তখন স্বাভাবিক ছিল না, রাষ্ট্রীয় প্রশাসন পুনর্গঠনের জন্য জরুরি সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা শপথ নেন।

এই রেফারেন্স প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। হাইকোর্ট জানিয়েছিল, গণঅভ্যুত্থানোত্তর পরিস্থিতি ছিল অসাধারণ। সে অবস্থায় রাষ্ট্রপতি যে উপদেশমূলক মতামত নিয়েছেন তা জনগণের ইচ্ছা ও সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই আদেশের বিরুদ্ধেই লিভ টু আপিল করা হয়, যা আজ আপিল বিভাগ খারিজ করেছে।

হাইকোর্ট তার রায়ে আরও উল্লেখ করেছিল যে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং এটি দীর্ঘদিন স্মরণে থাকবে। এই ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে মতামত চাওয়াকে সম্পূর্ণ বৈধ বলে ব্যাখ্যা দেন বিচারপতিরা।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির মনে হলে জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো আইনি প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে বা হতে পারে, তাহলে তিনি প্রশ্নটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পাঠাতে পারবেন। আদালত শুনানি শেষে রাষ্ট্রপতিকে উপদেশমূলক মতামত জানাবে। ঠিক এই অনুযায়ীই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট রেফারেন্স পাঠিয়েছিলেন।

তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বেঞ্চ মতামত দেয় যে রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের নিয়োগ দিতে পারবেন, এবং শপথও করাতে পারবেন। এই মতামতের ভিত্তিতেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠন সম্পন্ন হয়।

আজকের আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত সেই প্রক্রিয়াকে চূড়ান্তভাবে বৈধতার স্বীকৃতি দিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *