হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কেমন ছিলেন

মোঃ জাকির হোসেন

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি (১৯৮৩–১৯৯০)। তিনি ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কুচবিহার ও নিজ শহর রংপুরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের পর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

সামরিক জীবন

১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে অফিসার পদে যোগ দেন। ১৯৬০-৬২ সালে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে অ্যাডজুট্যান্ট ছিলেন। ১৯৬৬ সালে কোয়েটা স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। পরে ১৯৬৮ সালে শিয়ালকোটে ৫৪তম ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি পান এবং তৃতীয় ও সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ফিরে ১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালে ব্রিগেডিয়ার এবং একই বছরের আগস্টে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হন। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি সেনাবাহিনী প্রধান হন এবং ১৯৭৯ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন।

রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ও শাসন

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর এরশাদের রাজনৈতিক আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের সরকারকে উৎখাত করে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন, সংবিধান বাতিল করেন এবং নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (CMLA) ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ মার্চ বিচারপতি আবুল ফজল মো. আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন, কিন্তু বাস্তবে ক্ষমতা এরশাদের হাতেই কেন্দ্রীভূত ছিল। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

রাজনৈতিক কার্যক্রম ও জনপ্রিয়তা

এরশাদ ১৯৮৪ সালে দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন, যা তাকে ‘পল্লীবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালের মে মাসে উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরশাদ জয়ী হন। তার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী পাস করে ১৯৮২ সালে সামরিক শাসনের অধীনে নেওয়া সকল কার্যক্রম বৈধতা দেয়। তবে বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে ১৯৮৭ সালে সংসদ ভেঙে দিতে হয়।

পদত্যাগ ও পরবর্তী জীবন

প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে ১৯৯১ সালে গ্রেপ্তার হন এবং জেলে থাকাকালে রংপুর থেকে পাঁচটি আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসনে জয়ী হন। ছয় বছর কারাবাসের পর ১৯৯৭ সালে জামিনে মুক্তি পান। আদালতের রায়ে দণ্ডিত হওয়ায় তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়।

জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে তিন ভাগে বিভক্ত হলেও এরশাদ মূল ধারার নেতৃত্বে থাকেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তার দল ১৪টি আসনে, ২০০৮ সালে ২৭টি আসনে এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২টি আসনে জয় লাভ করে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হন।

সূত্র : উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নামযের সময়সূচি